01632 932 109
Banner

স্বল্প খরচে সাম্মাম চাষ – জৈব পদ্ধতি।

Last modified: May 27, 2025

এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে কিভাবে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক উপকরন ব্যবহার করে সাম্মাম চাষ করা যায়। এই পদ্ধতিতে অন্যান্য সবজি ফসল ও চাষ করা যাবে। সম্পূর্ণ প্রকৃয়াটি কয়েকটি মূল ধাপে বিভক্ত করা হল। ১ম দিন থেকে ৭০ দিন পর্যন্ত অর্থাৎ সাম্মাম ফল হারভেস্ট পর্যন্ত যাবতীয় কার্যক্রম আলোচনা করা হবে।

মূল ধাপগুলো হলঃ-

১। জমি চাষ ও বেড তৈরি।

২। তরল ২টি সার বাড়িতে তৈরি করা।

৩। চারা তৈরি ও রোপণ।

৪। জৈব মালচিং ও পরিচর্যা।

১) জমি চাষ ও বেড তৈরিঃ-

সাম্মাম চাষে উচু বা মাঝারী উচু জমি বাছাই করতে হবে। অর্থাৎ বর্ষার পানি জমে না থাকে এমন জমি হলেই হবে। বেলে বা বেলে দো’আশ মাটি সাম্মাম চাষের জন্য বেশী উপযোগী। জমি ২-৩টি চাষ দিয়ে মাটি আলগা করে নিতে হবে। শেষ চাষের আগে জমিতে পুরানো গোবর সার ছিটিয়ে দেয়া যেতে পারে। এক বছর পুরানো গোবর যেটির গন্ধ নেই কিছুটা কালো ও মেটে রঙের হয়ে গেছে এমন গোবর ব্যবহার করতে হবে। এভাবে এক সপ্তাহ রেখে দিতে হবে।

এরপর চারা রোপনের জন্য বেড তৈরি করতে হবে। সাম্মাম চাষ ২টি পদ্ধতিতে করা যায়। সমতল ও উলম্ব পদ্ধতি। প্রতি বিঘায় (৩৩ শতকে) চারা লাগে প্রায় ২ হাজার টি। এতে করে বীজ দরকার বিঘা প্রতি ৮০-৯০ গ্রাম। জমিতে সাড়ে চার ফিট দূরে দূরে দাগ টেনে দিতে হবে। বেডের প্রস্থ হবে সাড়ে তিন ফিট ও দুই বেডের মাঝে নালা থাকবে দুই ফিট। প্রতি দাগের দুই পাশের এক ফিট করে মাটি দুই পাশের বেডে তুলে দিতে হবে। এতে করে নালা ২ ফিট হবে এবং বেড হবে ৩.৫ ফিট। মাটি উঠিয়ে দিলে বেডের উচ্চতা যা হবে তাতেই চলবে।

২) বীজ থেকে চারা তৈরিঃ-

বীজ প্যাকেট থেকে বের করে ১ ঘণ্টা রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর ১ ঘণ্টা ছায়ায় রেখে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এখন একটি পরিষ্কার গ্লাসে পানি নিয়ে বীজগুলো ৪-৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। সাম্মাম ফলের বীজের জার্মিনেশন খুব ভালো হয়। এরপর সীড ট্রেতে কোকোপিট মিশ্রন দিয়ে প্রতি হোলে একটি করে বীজ বপন করতে হবে। হালকা পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে ট্রে ঢেকে রাখতে হবে ২ দিন। এরপর চারা বের হতে শুরু করলে ঢাকনা সরিয়ে ফেলতে হবে এবং কিছুটা আলো পায় এমন জায়গায় রাখতে হবে এবং প্রতি দিন অল্প করে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। ৯-১০ দিন বয়সের চারা জমিতে রোপণ করতে হবে।

৩.১) তরল অনুজীব সার তৈরিঃ-

১০০ লিটার ড্রামে ৯০ লিটার পরিষ্কার পানি নিতে হবে। ৫ কেজি দেশি গরুর গোবর, ২ কেজি গো-মূত্র, ১/২ কেজি ব্যাসন, ১/২ কেজি আখের ঝোল গুড়, এক মুষ্ঠি বুনো মাটি (যে মাটিতে রাসায়নিক সার পড়ে নি) নিতে হবে। এখন গোবর ও গো-মূত্র ড্রামে ঢেলে দিয়ে একটি শক্ত কাঠি দিয়ে নেড়েচেড়ে মিশ্রিত করতে হবে। এসময় খেয়াল রাখতে হবে ঘড়ির কাটা যে দিকে ঘোড়ে কাঠিও সেদিকে ঘুড়াতে হবে। প্রতি বারে এভাবেই করতে হবে। ব্যাসন, গুড় ও মাটির অংশ একত্রে আলাদা পাত্রে মিশ্রিত করে ড্রামে ঢেলে দিতে হবে। এভাবে ২/৩ মিনিট সমস্ত মিশ্রন মিশিয়ে তারপর ড্রাম এর মুখ কাপড় বা ছালা দিয়ে আটকিয়ে রাখতে হবে। গরমের দিনে ৩দিন এবং শীতের দিনে ৫ দিন পর এটি জমিতে প্রয়োগের উপযুক্ত হবে। জমিতে প্রয়োগের আগে এই মিশ্রন ছেকে নিয়ে ১০ গুন পানির সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। ১০০ লিটার অনুজীব সার ৫০ শতক জমির জন্য উপযুক্ত। জমির পরিমান কম বেশী হলে এই সার অনুপাতিক হারে কম বেশি তৈরি করে নিতে হবে।

৩.২) কীট বিতারক মিশ্রন তৈরিঃ-

১০০ লিটারের মিশ্রন তৈরি করার জন্য দশ প্রকারের ১০ কেজি পাতা সংগ্রহ করতে হবে। যেমনঃ- নিম পাতা, আতা পাতা, ভ্যান্না পাতা, বেল পাতা, ধুতুরা পাতা, তুলসী পাতা, এলোমেন্ডা পাতা,  বাশক পাতা, আম পাতা, পেয়ারা পাতা, পেঁপে পাতা, গাঁদা ফুল পাতা, ও দেশি গরু খায় না এমন পাতা বা ঔষধী গাছের পাতা। এমন কমপক্ষে ১০ প্রকার পাতা। এর সাথে আরও যুক্ত করতে হবে – কাঁচা হলুদ বাটা ২৫০ গ্রাম, কাঁচা মরিচ বাটা ২৫০ গ্রাম, দেশি পেয়াজ ২৫০ গ্রাম, দেশি আদা বাটা, কাঁচা গোবর ১ কেজি, ৪ কেজি গো মুত্র (যত পুরানো হবে ভালো), অল্প বুনো মাটি (যে মাটিতে ইতিপুর্বে রাসায়নিক ব্যবহার হয়নি)। পাতাগুলো ছিড়ে ছিড়ে এবং মসলা ভালোভাবে বেটে দিতে ড্রামে দিতে হবে। এগুলো দেয়ার পর ড্রামের বাকি অংশ পানি দিয়ে পূর্ন করতে হবে। এগুলো একত্রে মিশিয়ে ড্রামে ভিজিয়ে রাখতে হবে ৪০ দিনের মত। প্রতি দিন একটি লাঠি দিয়ে ক্লোকওয়াইস ঘুড়াতে হবে এক মিনিট। এভাবে সকাল বিকেল দুই বার নেড়েচেড়ে দিতে হবে। বাতাস চলাচল করতে পারে এমন পাটের ছালা দিয়ে ড্রাম ঢেকে রাখতে হবে।

প্রতি ১০ লিটার পানির সাথে ৩০০ মিলি থেকে ১০০০ মিলি পর্যন্ত মিশ্রন মিশিয়ে ব্যবহার করা যাবে। এই মিশ্রন কমপক্ষে ৬ মাস পর্যন্ত রাখা যাবে। ১০০ লিটার মিশ্রন ৫০ শতক জমির জন্য উপযুক্ত।

এই মিশ্রন প্রতি সপ্তাহে বা দশ দিন পরপর গাছে স্প্রে করতে হবে। আমাবশ্যা বা পুর্নিমার আগের দিন স্প্রে করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এটি সম্পুর্ন প্রাকৃতিক পদ্ধতি তাই ফসল হবে নিরাপদ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ। যেকোনো ফল-ফসলে এই স্প্রে করা যাবে। এভাবে স্প্রে করলে পোকামাকড় মরবে না বরং সরে যাবে। তাই এই পদ্ধতিতে প্রকৃতি হবে ভারসাম্যপূর্ন।

৪) জৈব মালচিং ও পরিচর্যাঃ-

চারা রোপনের ১২-১৫ দিন পর বেডের উপর দিয়ে প্রাকৃতিক উপকরন দ্বারা মালচিং করে দিতে হবে। মালচিং উপকরন হিসেবে খর-কুটা, ধানের নারা, সরিসা বা তিলের শুকনো খর বা শুকনো লতা-পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনার এলাকায় যেটি সহজে সংগ্রহ করতে পারবেন তাই দিয়ে মালচিং করবেন। মালচিং করে দিলে জমির মাটিতে রস থাকে এবং অনুজীব সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। এতে গাছের গ্রোথ ভালো হয় ও সতেজ থাকে।

উপরে যে দুইটি সার তৈরি করা হল সেটি কখন কিভাবে ব্যবহার করবেন এখন তা নিয়ে আলোচনা করি।

তরল অনুজীব সার এটি প্রতি সপ্তাহে বা প্রতি ১০ দিনে একবার জমিতে ব্যবহার করতে হবে। এই সারের সাথে ১০ গুন পানি মিশিয়ে জমিতে গাছের চারোদিকে প্রয়োগ করতে হবে। গাছের একদম গোড়ায় না দিয়ে চারোদিকে দিতে হবে। গাছের গোড়া থেকে এক ফুট দূর দিয়ে দিতে পারেন। এতে জমিতে প্রচুর অনুজীব তৈরি হবে এবং জমির উর্বরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।

কীট বিতারক মিশ্রন প্রতি কেজি মিশ্রনের সাথে ১০ গুন পানি মিশ্রিত করে প্রতি সপ্তাহে গাছে স্প্রে করে দিতে হবে। ফল সংগ্রহ করার ১০-১৫ দিন আগে থেকে জমিতে পানি প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।

2 thoughts on "স্বল্প খরচে সাম্মাম চাষ – জৈব পদ্ধতি।"

Leave a Message

Registration isn't required.




By commenting you accept the Privacy Policy